বিশেষ প্রতিনিধি- জাহারুল ইসলাম জীবন।
অপারেশন ডেভিল হান্ট এ-র শাব্দিক অর্থ বলতে যাহা বুঝায় তাহা হলো- সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত দেশের মধ্যে বিশেষ কিছুর উপর নিদিষ্ট কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হাসিল পূর্বক অর্জন করার জন্য যে অপারেশন পরিচালনা করা হয় এবং ডেভিল অর্থ শয়তান আর হান্ট অর্থ দমন অর্থাৎ অপারেশন ডেভিল হান্ট বলতে এক কথায় বোঝায় শয়তানকে দমন করার জন্য যে অপারেশন,তাহাই হলো ” অপারেশন ডেভিল হান্ট।”
অপারেশন ডেভিল হান্ট (Operation Devil Hunt) একটি বিশেষ অভিযান, যা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে শুরু করা হয়। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো দেশব্যাপী চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা হেতু বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি,গুপ্ত হত্যা,গুম,খুন,অবৈধ মাদকদ্রব্যের নিয়ন্ত্রণ,সন্ত্রাসবাদ দমন,অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার,চাঁন্দাবাজি বন্ধ ও দমন সহ সর্বসাধারণ জনগণের জান মালের নিরাপত্তা এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে দেশ বিরোধী নানামূর্খী দেশি বিদেশি গোপন ষড়যন্ত্র রোধকল্পে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করণের লক্ষ্যে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করিয়া আইনের আওতায় নিয়ে বিচার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার পটভূমিঃ-
২০২৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি, গাজীপুরের একটি এলাকায় ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে এবং ঘটনাস্থলে কয়েকজন কে অতর্কিত হামলা করিয়া হত্যা করা হয়, এই হামলায় নেতৃত্ব দেয় ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কয়েকশত নেতা-কর্মী। এই হামলার ফলে বেশ কয়েকজন হতাহত হন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে।
দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য জরুরী ভিত্তিতে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণঃ-
এই ঘটনার এবং দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একাধিক সংস্থার গোয়েন্দা কর্তৃক স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট সমূহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রদান করার পরিপ্রেক্ষিতে, সরকার কর্তৃক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) এবং ,নাসিমুল গনি,সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ দেশের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ তাৎক্ষনিক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশে “অপারেশন ডেভিল হান্ট” পরিচালনার কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দেয়। এই অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা যৌথভাবে একযোগে সারা বাংলাদেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট এর কার্যক্রম শুরু করে।
অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযান পরিচালনার লক্ষ্য সমূহঃ-
* সন্ত্রাসী ও চাঁন্দাবাজদের চাঁন্দাবাজি বন্ধ বা দমন করাঃ- সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা এবং তাদের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা।
* আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিঃ- দেশ ও দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধের মাত্রা দ্রুত হ্রাস করা।
* অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসাঃ-বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযান পরিচালনার অগ্রগতি সমূহঃ-অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হওয়ার পর থেকে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এই অভিযানের ফলে, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনায় সাধারণ জনমনে কিছু সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছেঃ- কিছু মহল থেকে এই অভিযানের সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ,এই অভিযানে অধিকাংশই বিতাড়িত আওয়ামী লীগ দলের নেতাকর্মীকে গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং অনেক নিরীহ মানুষও হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
অপারেশন ডেভিল হান্টের ভবিষ্যৎ ফলাফলঃ
অপারেশন ডেভিল হান্ট কতদিন চলবে এবং এর ফলাফল কী হবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মহল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযানকে সফল করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার উদ্দেশ্য লক্ষ্য এবং এই অপারেশনের ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলার দ্রুত উন্নতি করণ সহ কিছু রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ জনগনের বিভিন্ন অভিমত সমূহ্ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এভাবেই উঠে এসেছে।