মাধবপুর হাসপাতালে দালাল প্রতারকের দৌরাত্ম্য
মাধবপুর প্রতিনিধিঃ
দালাল ও প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে আসা অনেক রোগী। চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের বিভিন্ন ধরনের কথা বলে ভুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দালাল চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন মানহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এখানে দালালদের দৌরাত্ম্য লক্ষণীয়। দালালের অত্যাচারের কারণে সেবা পেতে বিঘ্ন ঘটছে সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ এসব দালালের খপ্পরে পড়ে হারাচ্ছেন সর্বস্ব।
গত কয়েক মাস হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্যে গরিব রোগীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। চিকিৎসকদের তথ্য মতে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী নাসিরনগর, বিজয়নগর উপজেলাসহ আশে পাশে থেকে এসে ৩০০ থেকে ৫০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
সীমান্তবর্তী উপজেলার এই হাসপাতালটিই এই অঞ্চলের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল। কয়েকটি দালালচক্র সদর হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে রোগীদের হয়রানি করছে। দালালরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। হাসপাতালে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ জানা যায়।
চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের বিভিন্ন ধরনের কথা বলে ভুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দালাল চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন মানহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। সেখানে গিয়ে বেশির ভাগ সময়ই সাধারণ মানুষ অপচিকিৎসার শিকার হন। দালালেরা এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে কমিশনের বিনিময়ে কাজ করে থাকেন। অন্যদিকে একজন রোগী যখন ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হন, তখন থেকেই পিছু নিতে শুরু করে দালাল চক্র। রোগীর চিকিৎসাপত্র হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে অবলম্বন করে নানা ধরনের কৌশল। চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগী জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ডাক্তার ওষুধ এবং টেষ্টের কথা লিখে দেওয়ামাত্র রোগীদের কাছ থেকে একরকম প্রেসক্রিপশন (চিকিৎসাপত্র) ছিনিয়ে নিয়ে দালালদের নির্ধারিত ও পছন্দের ডায়গনিষ্টিকে বিভিন্ন টেষ্ট করাতে বাধ্য করা হচ্ছে। হাসপাতালের কিছু কর্মচারীও এসব চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
চিকিৎসাপত্র হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারলেই রোগীরা জিম্মি হয়ে যায় দালাল চক্রের কাছে। তখন তাদের সঙ্গে ওই সব ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে যেতে বাধ্য করা হয় রোগীদের।চিকিৎসাপত্র ফেরত চাইতে গেলেই দালাল চক্রের সঙ্গে শুরু হয় বাগবিতন্ডা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে আসেন তিনি। হাসপাতাল কিছু লোক বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে জোড়াজুড়ি করেন। হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগে সব রকম টেষ্ট অল্প টাকাতেই করা হয় অথচ এখানে ভাল টেষ্ট হয়না বলে রোগীদের স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বহুদিন ধরেই দালালচক্র হাসপাতালে আসা রোগীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। তবে এ হাসপাতালটিতে অতীতের তুলনায় দালালদের তৎপরতা কম। দালালমুক্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কমিটির সভায় আলোচনা করে দালালদের অপতৎপরতা রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইমরুল হাসান বলেন, ইতিমধ্যে দালালদের তালিকা করা হয়েছে। কিছু দিন পূর্বে দুজন দালাল কে আটক করে থানায় সোর্পদ করা হয়েছে। সব ধরনের দালাল চক্রের সদস্যদের হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত করে যথোপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে হাসপাতালের সুস্থ–সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা হবে।