ভ্রমণ, বিনোদনের স্থান, দৃষ্টিনন্দন পটুয়াখালী ভার্সিটি, ক্যাম্পাস।।
দুমকি ও পবিপ্রবি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
পবিপ্রবির চারদিকে সবুজে আচ্ছাদিত। ক্যাম্পাসের প্রতিটি গাছ নতুন পাতায় ভরে গেছে। কোকিল এখন আর তেমন দেখা না গেলেও অন্য অতিথি পাখিরা গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে সাথে মিষ্টি সুরে গান তো আছেই। এ সময়ে বাহারি ফুলের শোভা বেড়েছে বহুগুণে। এমনটি দেখা গেছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে।
ছায়া ঘেরা শান্ত সুনিবিড় গ্রামের সৌম পরিবেশে ২০০০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী প্রতিষ্ঠিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ম (পবিপ্রবি) ক্যাম্পাস এক অনিন্দ্য সুন্দর জায়গা। যা হাজারো ভ্রমণপিয়াসুদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে।
মুল ক্যাম্পাস এর প্রধান ফটক (দক্ষিণ) থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রাঙ্গণ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। ফুল ছাড়াও ঋতুরাজ বসন্তের ছোঁয়ায় ক্যাম্পাস সেজেছে ভিন্ন সাজে। গাছে গাছে বিভিন্ন পাখির কিচিরমিচির ডাক।
‘১১০ একরের এই সবুজ ক্যাম্পাস এখন সবুজ বৃক্ষ আর ফুলে ফুলে ভরা। যার অপরূপ দৃশ্য আমাদের বিমোহিত করে চলেছে নিরন্তর। রাস্তার দু’ধারে ফুঁটে থাকা নানা রঙ বেরঙের ফুল। মাঝে মাঝে মনে হয় ক্যাম্পাসে নয়, হেঁটে ফুলের বাগানের মধ্যে ঢুকে পড়েছি।’
ক্যাম্পাসের নীল ও লাল কমল লেকের পারে মেহগনি গাছে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির আনাগোনা বিমোহিত করে ভ্রমণ পিপাসু জুবাইয়ার । তিনি বলেন, এই মনমুগ্ধকর দৃশ্য তাকিয়ে থাকার মতো। ‘১১০ একরের নয়নাভিরাম পবিপ্রবি'র মুল ক্যাম্পাস এবং বরিশালের বাবুগঞ্জ ক্যাম্পাস উভয়ই আমার একটি ভালোবাসার জায়গা। পবিপ্রবির বরিশাল ক্যাম্পাস আমার বাসার কাছে হলেও সেখানে কম গেলেও ছুটি পেলে প্রায়ই পরিবার নিয়ে মুল ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসি। এর আগে ক্যাম্পাসটি এতটা সুসজ্জিত ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম এবং উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম হেমায়েত জাহান সহ প্রশাসনের এমন উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ঘুরতে আসা এমন হাজারো ভ্রমণ প্রেমির মনের অজান্তে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে সামনে তাকালে আপনিও ভুলবশত ভাবতে পারেন যে, কোন ফুলের বাগানে ঢুকে পড়েছেন। কিন্তু না। এটি কোনো ফুলের বাগান নয়। এটি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে স্থাপিত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)।
ফুল নাকি ভালোবাসার প্রতীক। ফুল ভালোবাসে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ফুলকে ভালোবেসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের সামনে গড়ে তোলা হয়েছে ফুলের বাগান। যা ১১০ একরের সবুজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরো হাজার গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্যাম্পাস সেজেছে রঙিন সাজে। ক্যাম্পাসের প্রশাসন ভবন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টিএসসি, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, চিকিৎসাকেন্দ্র, নীল ও লাল কমল লেক, বিভিন্ন অনুষদ ভবন, বিভিন্ন আবাসিক হল ছেয়ে গেছে ফুলে ফুলে। ফুটেছে নানা প্রজাতির ফুল। এদের মধ্যে- হরেক প্রজাতির গাঁদা, ডালিয়া, গোলাপ, হাসনাহেনা, কসমস, সূর্যমুখী, জবা, জুঁই, চামেলি, টগর, বেলি উল্লেখযোগ্য।
বিকেল হলেই যেন মেলা বসে ক্যাম্পাসে। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেন হারিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রেমিক-প্রেমিকারা। এছাড়াও দেখা যায় ছুটির দিনে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের আনাগোনা। দৃষ্টিনন্দন এ লেকদুটি'র মধ্যে নান্দনিক বাংলোঘর ও কারুকার্যে গড়া সেতু। মৎস্য গবেষণার কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে এ লেকে। লেকের চারপাশ বৃক্ষ শোভিত। পরিচ্ছন্ন পাড়ে রয়েছে বসার সুন্দর ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন, যা স্থাপত্যে আগ্রহীদের জন্য আকর্ষণীয়।
বিকেলে যখন শ্বেত শুভ্র রাজ হংস-হংসী এ লেক দু'টিতে ভেসে বেড়ায় তখন সৃষ্টি হয় মনোমুগ্ধকর এক অপরূপ দৃশ্যের। এছাড়া এ ক্যাম্পাসে রয়েছে পদ্ম পুকুরসহ বেশ কটি পুকুর, ক্যাম্পাসজুড়ে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা ফুল ও বৃক্ষের সমাহার। মোটকথা ক্যাম্পাসটি সবুজে ঘেরা এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও ফুলের সমারোহে সমৃদ্ধ, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করবে।
প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দৃষ্টিনন্দন শৈল্পিক ভাস্কর্য "'মুক্ত বাংলা"’। রয়েছে ৭ বীর শ্রেষ্ঠের আবক্ষ ভাস্কর্য। এছাড়া শহীদ মিনার।
পূর্ব ক্যাম্পাসে বিস্তৃত ৩৭ একরের কৃষি ফার্ম, গবেষণাগার, বিজয় ২৪ হল, এম কেরামত আলী হল, জার্ম প্লাজম সেন্টার এবং সৃজনী বিদ্যানিকেতনের ক্যাম্পাসসহ সমগ্র ক্যাম্পাসের প্রতিটি সড়ক ও হল নান্দনিকভাবে সাজানো। যা প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম হেমায়েত জাহান এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য ও শিক্ষার মান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তারা ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও শিক্ষা-গবেষণার পরিকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা, ক্লাসরুমের মানোন্নয়ন, এবং শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত করার জন্য নিয়মিত তদারকি করছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে এবং ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছেন। তাঁদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষণায় আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্থাপত্যশৈলী ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণ করতে পারবে বলে তারা মনে করেন।।#
প্রকাশক ও সম্পাদক : কায়েস আহমদ সালমান
হেড অফিস: সায়হাম ফিচার কমপ্লেক্স মাধবপুর হবিগঞ্জ Email: www.dainikcrimesin@gmail.com