ডিমলার কৃষকেরা ধানের ছেড়ে ভুট্টা চাষে দিকে ঝুকছে।
মোঃ বাদশা প্রামানিক নীলফামারী প্রতিনিধি
উত্তর জনপদের শস্যভান্ডার নামে খ্যাত নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। এতে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দখছেন কৃষক। অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বল্প খরচে অধিক ফলন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, ভুট্টা চাষে দরিদ্র কৃষকেরা আর্থিকভাবে সফল হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় ১০ ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণে ভুট্টা চাষ হয়েছে। মাঠের পর মাঠ ভুট্টাখেত। সবুজ রঙের গাছগুলো দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। খেতগুলোতে পানি ও কীটনাশক দেওয়া এবং পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। সেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও সমানতালে কাজ করতে দেখা যায়।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লাভজনক ও এ অঞ্চলের মাটিতে ভালো ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ইতিমধ্যে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ধানি জমিতে ভুট্টা চাষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর তিতা পাড়া গ্রামের ধানচাষি মফিজুল ইসলাম বলেন, গতবরে আমি ১৮বিঘা ধান ও ৪বিঘা ভুট্টা লাগিয়ে ছিলাম।ধান পেয়েছি ২০মন। উৎপাদন খরচ ১২ হাজার এবং লাভ ৮হাজার। প্রতি বছরে কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যগ ধানের ফসলে প্রচুর ক্ষতি করে। তাছাড়া পোকামাকড় রোগ বালাইয়ে ক্ষেত্রে বাজারে প্রচলিত ওষুধ একাধিকবার স্প্রে করেও আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায় না। অপরদিকে ভুট্টা পেয়েছি প্রতি বিঘায় ৪৫ মন করে। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। এতে লাভ হয়েছে ২৫হাজার টাকা।তাই এবারে ১৫ বিঘা ভুট্টা চাষ করছি। এতে ভুট্টায় ঝুঁকি কম লাভ বেশী অপর দিকে ধানে ঝুঁকি বেশি লাভ কম। তাই ধান চাষ কমিয়ে ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি করেছি।
ভুট্টাচাষি গয়াবাড়ী ইউনিয়নের দুলাল হোসেন বলেন, এই এলাকার সিংহভাগ জমিতে আলু উৎপন্ন হয়। কিন্তু মৌসুমজুড়েই আলুর বাজারদর ওঠানামা করায় চাষিরা গতবার খুব একটা লাভ করতে পারেননি। তাই এবার অনেকেই ভুট্টার চাষ করছেন। আশা করি ফলনও বাম্পার হবে। ন্যায্য দাম পেলেই কষ্ট সার্থক হবে।
উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের আর এক কৃষক পরিমল রায় জানান, ভুট্টা চার মাসের ফসল।নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ভুট্টার বীজ বপন করতে হয়। এক বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করতে বীজ, জমি চাষ, সেচ ও সার-কীটনাশক, খেতের আগাছা পরিষ্কার, ভুট্টা কাটা, বাড়িতে নিয়ে আসা, মাড়াই ও বিক্রির উপযোগী করা সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে খরচ হয় প্রায় ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা। আর বাজারে ভালো দাম থাকলে বিক্রি হয় প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ভুট্টায় অধিক লাভ হওয়ায় ভুট্টা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শওকত রেজা জানান, এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কয়েকগুণ ভুট্টার চাষ হয়েছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে। এলাকার কৃষকেরা যাতে ভুট্টা যথাযথভাবে,স্বল্প খরচে উচ্চফলনশীল ভুট্টা উৎপাদন করতে পারেন এ জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি এবং আমাদের মাঠকর্মীরা মাঠে-ঘাটে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মীর হাসান আল বান্না বলেন, মাত্র পাঁচ বছর আগেও ডিমলা উপজেলায় এত ভুট্টা চাষ হতো না। এখন এ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ভূট্রা চাষিদের প্রত্যেককের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও স্যার বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমান চলতি মৌসুমে ৮৫ ভাগ ভূট্রা রোপন শেষ হয়েছে। এছাড়া গবাদি পশুর খাদ্য, মাছের ফিট, মুরগির ফিটসহ দেশের বিভিন্ন কোম্পানিগুলোতে ভূট্রার চাহিদা প্রচুর রয়েছে আশাকরি কৃষকেরা এবারও ন্যায্য দাম পাবে। এখন লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষ বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
তাং ১২-১২-২৪ইং
মোঃবাদশা প্রামানিক
মোবাঃ ০১৭১৮১৭২৬৬
প্রকাশক ও সম্পাদক : কায়েস আহমদ সালমান
হেড অফিস: সায়হাম ফিচার কমপ্লেক্স মাধবপুর হবিগঞ্জ Email: www.dainikcrimesin@gmail.com