বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন
দৈনিক ক্রাইমসিন ডেক্স :
অনুপ্রেরণার আরেক নাম জহিরুল হক জহির। বর্তমান বয়স তার ৯ বছর হলেও সে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের জয়পুর মসজিদ বাজার বর্ণমালা বিদ্যা নিকেতনের ১ম শ্রেণির ছাত্র। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও একক অভিনয়ে পারদর্শী এই শিশু। তবে অন্য সবার মত স্বাভাবিক নয় সে। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত নেই ও একটি (ডান পা)পা ছোট।
প্রতিদিনই মার কোলে চরে কিংবা এক পায়ে কুড়িয়ে কুড়িয়ে বা অটোরিক্সায় করে স্কুলে যাওয়া আসে করে সে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানাতে চেষ্টা করছে তার প্রবল ইচ্ছা শক্তির কাছে। থেমে নেই তার পড়াশুনা। জীবনের লক্ষ্য পড়াশুনা করে বড় অফিসার হওয়া। হগিঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক শামছুল হক ও গৃহিণী রত্না বেগমের ছেলে। জহিরের জন্মের কয়েক মাস পর কৃষক পিতা শামছুল হক সংসারের ভাব দূর করতে প্রবাসে পারি জমান। কষ্ট আর অভাবের সংসার শামছুল হকের । তার এক ছেলে এক মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া আক্তার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণীতে পড়াশোনা করে।
জহিরুলের মা রত্না বেগম বলেন, জহিরকে বাসায় পড়াতাম হাত পা সমস্যা বলে স্কুলে দিতাম না। তখন বর্ণমালা বিদ্যানিকেতন এর প্রধান শিক্ষক শাকিল মিয়া আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে জহিরুল হক কে স্কুলে ভর্তি করেন। আমার চিন্তা ছিল যার হাত নেই সে লিখবে কিভাবে? আর তার পড়াশুনা করে কি হবে? কয়েক দিন পর দেখলাম পা দিয়ে জহির লিখা শিখে যায়। এত অল্প সময়ে লিখতে পারাতে আমি সহ শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবাক হয়। প্রথম প্রথম স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা জহিরকে আর চোখে দেখতো। অবাক করা বিষয় হলো, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্যেও পড়াশুনা ছাড়াও জহির বেশ কিছু প্রতিভার অধিকারী। সে ভাল একক অভিনয় করতে পারে। বর্ণমালা বিদ্যা নিকেতন এর প্রধান শিক্ষক শাকিল মিয়া বলেন, জহির পড়াশুনায় বেশ মেধাবী। পড়াশুনা ছাড়াও অভিনয়, গান একবার শিখিয়ে দিলে অতি দ্রæত তা আয়ত্ব করতে পারে। জহিরুলের মা রতœা বেগম আরও বলেন,বর্তমানে জহিরুলের কপালের সামনে একটা টিউমার হয়েছে। টিউমারটা অপারেশন করা খুব জরুরী কিন্তুুু অর্থ অভাবে অপারেশন করাতে পারছিনা । জহিরুল হক বলেন, বাড়িতে থাকতাম যখন সবাই আমার সাথে মজা করতো, আমাকে নিন্দা করতো। সবাই ভাবতো, আমার হাত পা নাই বলে আমি কিছু করতে পারবো না। কিন্তু মা ও শিক্ষকদের সহায়তায় আমি পড়াশুনা শিখার চেষ্টা করছি নিয়মিত স্কুলে যাইতেছি। জহিরুলের ব্যাপারে কথা হয় চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সোহাগের সাথে তিনি বলেন,তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হয়েছে । সে পড়াশোনা চালিয়ে গেলে সরকারী বিভিন্ন সহযোগীতা করা হবে।